- 08 Sep 2025
- Md. Joynal Abdin
- Knowledge Center, Research Articles
- Comments: 0
গ্লোবাল বেস্ট প্রাকটিসে শক্তিশালী এফবিসিসিআই
মো: জয়নাল আব্দীন
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ট্রেড এণ্ড ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ (টিএণ্ডআইবি)
নির্বাহী পরিচালক, অনলাইন ট্রেনিং একাডেমী (ওটিএ) এবং
মহাসচিব, ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ ছাতা–সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই (FBCCI) দেশের শিল্প–বাণিজ্যের গতিপথে নীতিগত সংলাপ, বাজার সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা–নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। তবে দ্রুত পাল্টে-যাওয়া বৈশ্বিক বাণিজ্যপরিস্থিতি সাপ্লাই-চেইন পুনর্বিন্যাস, ডিজিটালাইজেশন, গ্রিন–কমপ্লায়েন্স, জিও-ইকোনমিক ঝুঁকি—এই সবকিছুর প্রেক্ষাপটে এফবিসিসিআইকে এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিজেদের কার্যকারিতা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানিচিত্র এই জরুরতাকে আরও স্পষ্ট করে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে শুধুমাত্র তৈরি পোশাক (RMG) খাতের অবদান ৩৯.৩৪ বিলিয়ন ডলার মোটের প্রায় ৮১.৫%। এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা একমুখী ঝুঁকি তৈরি করে এবং রপ্তানি বৈচিত্র্য, ভ্যালু-অ্যাডিশন ও নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব প্রয়োজন যা এফবিসিসিআইকে নিতে হবে।
ট্রেড-লজিস্টিকস ও সীমান্ত–কার্যকারিতার মানোন্নয়নও সমান জরুরি। বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক্স পারফরম্যান্স ইনডেক্স (LPI) ২০২৩-এ বাংলাদেশ ৮৮তম এবং গড় স্কোর ২.৬ যেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, অবকাঠামো, শিপমেন্ট অ্যারেঞ্জমেন্ট—সব কটি উপমাত্রায় উন্নতির বড় সুযোগ আছে। এসব সূচকে উন্নয়ন না হলে রপ্তানির সময়-খরচ বেড়ে প্রতিযোগিতা-ক্ষমতা কমে যায়।
দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড CMSME/SME খাত যারা প্রতিষ্ঠানসংখ্যার প্রায় ৯৯.৯% জুড়ে আছে এবং সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী GDP-তে তাদের অবদান প্রায় ২২–২৩%-এর ঘরে। অথচ এই বিশাল ঘাঁটিকে উৎপাদনশীলতা, অর্থায়ন, গ্লোবাল–লিংকেজ ও স্ট্যান্ডার্ড-কমপ্লায়েন্সে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পেলে আরও অনেক বড় অবদান সম্ভব। ফলে, আন্তর্জাতিক বেস্ট প্রাকটিস অনুযায়ী নীতি-সহযোগিতা, তথ্যসেবা, ক্লাস্টার-ডেভেলপমেন্ট, এবং ডিজিটাল বিজনেস-সাপোর্টে এফবিসিসিআই-র কৌশলগত পদক্ষেপ অপরিহার্য।
একই সঙ্গে FDI প্রবাহ যা নতুন প্রযুক্তি, ম্যানেজমেন্ট এবং গ্লোবাল বাজার-সংযোগ আনে বাংলাদেশে চাপের মুখে। ২০২৪ সালে নেট FDI ১.২৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-এর ১.৪৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমেছে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি-সংলাপ, সেক্টর–নির্দিষ্ট প্রমোশন ও ‘ওয়ান-স্টপ’ ব্যবসায়িক সেবায় এফবিসিসিআই আরও সক্রিয় হলে এই প্রবাহ শক্তিশালী হতে পারে।
সব মিলিয়ে রপ্তানিতে অতিনির্ভরতা, লজিস্টিক্স দক্ষতার ঘাটতি, এসএমই-র অন্তর্ভুক্তিমূলক সক্ষমতা-বৃদ্ধি ও এফডিআই আকর্ষণের চ্যালেঞ্জ এই চারটি অগ্রাধিকারে গ্লোবাল ফেডারেশনগুলোর বেস্ট প্রাকটিস (যেমন: প্রমাণভিত্তিক নীতি-এডভোকেসি, ডিজিটাল সদস্য সেবা, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং/রোডশো, গ্রিন-কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন সাপোর্ট) গ্রহণই এফবিসিসিআই-কে “ক্লাসিক ট্রেড-বডি” থেকে বিশ্বমানের ইকোসিস্টেম-এনাবলার-এ রূপান্তরের রূপরেখা দেবে। এই প্রবন্ধে আমরা সেই রূপরেখা নীতি, সেবা, অংশীদারিত্ব ও শাসন-সংস্কার চারটি স্তম্ভে বিশ্লেষণ করব, যাতে এফবিসিসিআই বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে আগামী দশকে আরও প্রতিযোগী, স্মার্ট ও টেকসই করে তুলতে পারে।
২. নীতি প্রভাব ও এডভোকেসি শক্তিশালীকরণ
২.১ প্রমাণভিত্তিক গবেষণা
উদ্দেশ্য: সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য, ডেটা সমর্থিত নীতি প্রস্তাব পেশ করা; বেসরকারি খাতের অভিন্ন অবস্থান গঠন।
কী গড়তে হবে:
- FBCCI Policy & Research Wing (PRW): অর্থনীতি, বাণিজ্য, ট্যাক্স/ভ্যাট, এসএমই, শ্রমবাজার, লজিস্টিক্স প্রতি খাতে একজন লিড অ্যানালিস্টসহ 10–12 জনের দল।
- Sectoral Knowledge Hubs: RMG, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মা, আইটি, এগ্রো ফুড, লেদার, প্লাস্টিক প্রত্যেক সেক্টরে শিল্প উদ্যোক্তা+অ্যাকাডেমিয়ার যৌথ উপদেষ্টা প্যানেল।
- Data Partnerships: BBS, NBR, EPB, Bangladesh Bank, BEZA/BEZA, Chittagong Port, e-commerce অ্যাসোসিয়েশন ডেটা শেয়ারিং MoU।
ডেলিভারেবলস (মানক ফরম্যাট):
- Quarterly Policy Brief (8–10 পৃষ্ঠা): সমস্যা–বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক তুলনা, ব্যয় সুবিধা (CBA), 5–7টি সুপারিশ, KPI ও বাস্তবায়ন টাইমলাইন।
- Regulatory Impact Assessment (RIA): নতুন/সংশোধিত নীতির আউটকাম সিমুলেশন (CGE/IO টুলস), এসএমই–প্রভাব আলাদা অধ্যায়।
- Rapid Issue Notes (2–3 পৃষ্ঠা): জরুরি বিষয় (ডলার লিকুইডিটি, LC, LPI, RoO) নিয়ে 72 ঘণ্টার মধ্যে।
প্রক্রিয়া:
- মাসিক Enterprise Pulse Survey (৫০০–১,০০০ প্রতিষ্ঠান), ত্রৈমাসিক Business Confidence Index।
- Open Data Portal: সার্ভে–ড্যাশবোর্ড, ইনফোগ্রাফিক, ডাউনলোডযোগ্য CSV।
KPI ও টাইমলাইন:
- ৬ মাসে: ৬টি Policy Brief, ২টি RIA, ১২টি Rapid Note; Open Data Portal চালু।
- ১২ মাসে: ২০+ সরকারি/বেসরকারি ডেটা–লিংক; Business Confidence Index–এর ৪টি রিলিজ।
২.২ সরকারের সাথে কৌশলগত সংলাপ
উদ্দেশ্য: নীতি প্রণয়নে প্রাসঙ্গিক সময়ে অংশগ্রহণ; “no surprises” নীতি–সংলাপ সংস্কৃতি গড়া।
কাঠামো ও ক্যালেন্ডার:
- High-Level Public–Private Dialogue (PPD): অর্থ/বাণিজ্য/শিল্প/এনবিআর/বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক একবার, পূর্বপ্রেরিত অ্যাজেন্ডা ও প্রি–রিড।
- Thematic Working Groups (TWG): ট্যাক্স–ভ্যাট, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, এসএমই–ফাইন্যান্স, স্কিলস, স্ট্যান্ডার্ডস/ESG প্রতি ৬–৮ সপ্তাহে।
- Green Channel for Reforms: ৫–৭টি “Quick Win” রিফর্মে যৌথ ডেলিভারি ট্র্যাকার (উদাহরণ: AEO পাইলট, e-Invoice, bonded warehouse simplification)।
সংলাপের নিয়ম (Rules of Engagement):
- মিটিংয়ের ৭ দিন আগে Issue Note; মিটিং পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় Action Memo ও দায়িত্ব বণ্টন।
- এক-পৃষ্ঠার Ministerial Brief: ৩টি সুপারিশ, রাজস্ব/বিনিয়োগ প্রভাব, বাস্তবায়ন ধাপ।
KPI:
- ১২ মাসে ৪টি উচ্চস্তরের PPD, ২৪+ TWG সেশন; কমপক্ষে ৫টি রিফর্মের গেজেট/সার্কুলার।
- বাজেট–পূর্বে FBCCI-র ১০টি সুপারিশের অন্তত ৪–৫টি গৃহীত।

৩. ডিজিটালাইজেশন ও সেবার আধুনিকায়ন
৩.১ ডিজিটাল সেবার প্রসার
উদ্দেশ্য: সদস্যসেবা “physical-first” থেকে “digital-first” করা; সময়/খরচ কমানো; ডেটা–চালিত সিদ্ধান্ত।
মূল প্ল্যাটফর্মসমূহ:
- FBCCI One-Stop Member Portal:
- e-Membership (অনলাইন জয়েন/রিনিউ, e-KYC), e-Payment, support ticketing।
- e-Certificate of Origin (e-CoO): ডিজিটালি সই, QR-ভেরিফায়েবল; কাস্টমস/ব্যাঙ্কের সাথে API।
- Trade Intel Hub: ট্যারিফ/NTM/FTA ডেটা, বাজার–ড্যাশবোর্ড, টেন্ডার/বায়ার–অ্যালার্ট।
- e-Learning (LMS): রপ্তানি কমপ্লায়েন্স, ESG, কাস্টমস, সাপ্লাই চেইন, ডিজিটাল মার্কেটিং মডিউলার মাইক্রো–কোর্স; সার্টিফিকেট।
- CRM + Data Lake: সদস্য–ইন্টারঅ্যাকশন, ইভেন্ট, কোর্স, সার্টিফিকেট, নীতিপত্র—সব একত্রে।
সাইবার/গভর্ন্যান্স: ISO 27001 রোডম্যাপ, 2FA, ডেটা–শেয়ারিং SOP, Backup & DR।
KPI ও টাইমলাইন:
- ৩–৬ মাসে: Portal v1 (e-Membership/e-Payment/e-CoO pilot, ৫০টি চেম্বার অনবোর্ড)।
- ১২ মাসে: ২০,০০০+ সক্রিয় ইউজার, ৮০% CoO অনলাইনে, ৫০+ কোর্স, NPS ≥ 60।
৩.২ প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংযোগ
উদ্দেশ্য: প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি ডায়াসপোরা–ইনভেস্টরদের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রবেশদ্বার।
ইনিশিয়েটিভস:
- Diaspora Investor Portal: সেক্টর–ওয়াইজ ইনভেস্টমেন্ট থিসিস, রিস্ক–রেটিং, জমি/ইনসেনটিভ/ও-SOP; “Ask FBCCI” লাইভ কনসিয়ার্জ।
- Virtual Deal Rooms: ডিউ–ডিলিজেন্স ডেটা, টার্মশিট টেমপ্লেট, কো–ইনভেস্টমেন্ট তালিকা (VC/PE/DFI)।
- Monthly Global Investor Hours: সময়–জোনভিত্তিক ওয়েবিনার; বিদেশী মিশনে স্যাটেলাইট ইভেন্ট।
- Embassy-FBCCI Desk: দূতাবাস–ভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট লিয়াজোঁ, ত্রৈমাসিক পাইপলাইন রিপোর্ট।
KPI:
- ১২ মাসে: ১০০+ লিড, ২০+ টার্মশিট, ৫–৭টি ক্লোজড ডিল/জেভি; ৩০+ দেশের অংশগ্রহণ।
৪. বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ
৪.১ আন্তর্জাতিক মেলা ও রোডশো
উদ্দেশ্য: “Made in Bangladesh” ব্র্যান্ডিং, বায়ার–সোর্সিং, নতুন বাজারে এন্ট্রি।
মডেল:
- FBCCI Global Expo Series: বছরে ৩টি ফোকাস–বাজার (উদাহরণ: গালফ+আফ্রিকা+লাতিন আমেরিকা); প্রতিটিতে Sector Pavilions (RMG beyond basics, লেদার–ভ্যালুচেইন, ফার্মা–জেনেরিক/OTC, আইটি/ডিজিটাল, ফুড–অ্যাগ্রি, লাইট–ইঞ্জিনিয়ারিং)।
- Roadshow+B2B Weeks: স্থানীয় চেম্বার/ট্রেড–প্রোমোশন এজেন্সিগুলোর (FICCI, CCPIT, Apex-Brazil ইত্যাদি) সাথে যৌথ আয়োজন; Country Briefing + B2B + Site Visits প্যাকেজ।
- Buyer Recruitment Playbook: বায়ার–সেগমেন্টেশন, প্রি–ম্যাচিং, অনলাইন শিডিউলার, পোস্ট–ইভেন্ট লিড–নার্চারিং।
KPI:
- প্রতিটি ইভেন্টে ২০০+ বায়ার, ১,০০০+ B2B মিটিং, ১০০+ LoI/LoA; ১২ মাসে ৩০০+ মিলিয়ন USD সম্ভাব্য অর্ডার–পাইপলাইন।
৪.২ নতুন বাজার অনুসন্ধান
উদ্দেশ্য: RMG–নির্ভরতা কমিয়ে উচ্চ–মার্জিন পণ্য/সেবা ও নতুন ভৌগোলিক বাজারে প্রবেশ।
স্ট্র্যাটেজি:
- Market Prioritization Matrix: বাজার–আকার, ট্যারিফ/NTM, লজিস্টিক্স খরচ, RoO, ESG ঝুঁকি স্কোরিং করে শীর্ষ ১২টি বাজার (গালফ, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, সেন্ট্রাল এশিয়া, ইইউ নিশ)।
- Mutual Recognition & MoU Drive: স্ট্যান্ডার্ড/টেস্টিং/হালাল/ফাইটো–স্যানিটারি MRAs; কাস্টমস সিঙ্গেল–উইন্ডো কানেক্টিভিটি।
- Anchor Programmes:
- Bangladesh–Gulf Supply Chain Corridor (খাদ্য, মেডিক্যাল, নির্মাণ মেটেরিয়াল)।
- Bangladesh–Africa Health & Agri Access (ফার্মা, ডায়াগনস্টিক, অ্যাগ্রি ইকুইপ)।
- Bangladesh–LATAM Textiles & Leather Link (ইয়ার্ন–ফ্যাব্রিক, ফুটওয়্যার/গুডস)।
- Export Readiness Clinics: লক্ষ্য বাজারভিত্তিক কমপ্লায়েন্স/লেবেলিং/ডকুমেন্টেশন, ফাইন্যান্স লিংকেজ (EDF/Exim), বীমা ও লজিস্টিক্স–কোটা।
KPI:
- ১৮ মাসে: ১২টি অগ্রাধিকার বাজারে ২৪+ MoU/MRA, ৫০০+ নতুন বায়ার–কন্ট্যাক্ট, নন-RMG রপ্তানিতে ≥১৫% প্রবৃদ্ধির পাইপলাইন।

৫. উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তি
৫.১ নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা
বিশ্বের নামকরা ফেডারেশনগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছে যেমন FICCI Ladies Organisation (FLO) বা Women’s Business Council (UK)। তারা নেটওয়ার্কিং, ফান্ডিং, বাজার প্রবেশাধিকার এবং নেতৃত্ব উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এফবিসিসিআইকেও একই ধাঁচে একটি “Women Entrepreneurs Desk” গড়ে তোলা জরুরি। এর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, বিজনেস প্ল্যান প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক এক্সপোতে অংশগ্রহণ ও ভেঞ্চার ফান্ডিং–এর সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও দ্রুত সম্প্রসারিত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
৫.২ যুব ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫% এর বেশি জনসংখ্যা ৩৫ বছরের নিচে। এ বিশাল জনসংখ্যাগত সুবিধাকে কাজে লাগাতে হলে এফবিসিসিআইকে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি, প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেন্টরশিপ এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে সংযোগ ঘটানো যেতে পারে। পাশাপাশি, একটি FBCCI Venture Fund গঠন করলে প্রাথমিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারা সহজে অর্থায়ন পাবে। নিয়মিত হ্যাকাথন, আইডিয়া প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশি তরুণরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবে।
৬. সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কার
৬.১ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
একটি আধুনিক ও কার্যকর ফেডারেশন হিসেবে দাঁড় করাতে হলে এফবিসিসিআইকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় মৌলিক সংস্কার আনতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্রুততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে Board–Committee–Secretariat Alignment দরকার। প্রতিটি কার্যকরী কমিটির জন্য সুস্পষ্ট Terms of Reference (ToR), কাজের সময়সীমা ও রিপোর্টিং মেকানিজম থাকতে হবে। ডিজিটাল মিটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সভা পরিচালনা, ই–ফাইলিং সিস্টেম ও ট্রান্সপারেন্ট ভোটিং প্রক্রিয়া চালু করলে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।
৬.২ দক্ষ জনবল নিয়োগ
আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে হলে শুধুমাত্র নির্বাচিত পরিচালক নির্ভর প্রশাসন যথেষ্ট নয়। এফবিসিসিআইকে একটি পেশাদার টিম নিয়োগ দিতে হবে, যেখানে অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি, আন্তর্জাতিক ব্যবসা উন্নয়ন, ডিজিটাল সলিউশন, গবেষণা ও যোগাযোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন। একই সঙ্গে কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, বিদেশি চেম্বারগুলোর সাথে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং পারফরম্যান্স ভিত্তিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করলে সেবার মান অনেক বেড়ে যাবে।
৭. উপসংহার
বাংলাদেশ আজ একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ, যেখানে বেসরকারি খাতই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। এই প্রেক্ষাপটে এফবিসিসিআই কেবল ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি সংগঠন নয়, বরং নীতি প্রভাবক, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের পথপ্রদর্শক, উদ্যোক্তা উন্নয়নের সহায়ক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করতে পারে। এজন্য বিশ্বখ্যাত ফেডারেশনগুলোর বেস্ট প্রাকটিস গ্রহণের বিকল্প নেই।
প্রমাণভিত্তিক গবেষণা, কৌশলগত সংলাপ, ডিজিটালাইজেশন, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব, নারী ও যুব উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আধুনিকায়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে এফবিসিসিআই সত্যিকার অর্থেই একটি বিশ্বমানের ফেডারেশনে রূপ নিতে পারবে। শক্তিশালী এফবিসিসিআই মানেই শক্তিশালী বেসরকারি খাত, আর শক্তিশালী বেসরকারি খাতই বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি বৈচিত্র্য ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করবে।